টলোমলো সমাজের আনাচে-কানাচে চন্দ্রিলোচিত চরকিপাক
- Suman Dalui

- Dec 22, 2021
- 1 min read
২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়তে প্রকাশিত পঁচিশটি রম্যরচনার সংকলন 'ঘন চক্কর'। বুদ্ধিদীপ্ত শ্লেষে ভরপুর রচনাগুলি ভণ্ডামির আঁতে ঘা দেয়, পাঠককে নগ্ন করে দাঁড় করিয়ে দেয় আয়নার মুখোমুখি। খেউড়বাজের বজ্জাতি থেকে হুব্বাজনের মাতামাতি, রাজনীতির নীতিহীনতা থেকে সামাজিক প্রীতিহীনতা, দু-নম্বরি ধন থেকে অ্যাঞ্জেলিনার স্তন—রকমারি বিষয়ে গভীর শ্লেষাত্মক বিশ্লেষণ। বিশেষ উপভোগ্য কাল্পনিক সাক্ষাৎকারগুলি, যেখানে মা সরস্বতীর হাঁস থেকে অতি-রঞ্জন রশ্মিতে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া কাদম্বরীদেবী অনেকেই উপস্থিত। গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে হালকা চালে পলকা বাঙালি পাঠকের মগজাস্ত্রে মোক্ষম টোকা দিতে চন্দ্রিলের অননুকরণীয় গদ্যভাষার জুড়ি মেলা ভার। সব বিষয়ে পাঠক সহমত পোষণ নাও করতে পারেন। তবে ভাবতে নারাজ পাঠক এসব লেখা পড়ে ফের ভাবা প্র্যাকটিস করতে বাধ্য হবেন। লেখক কোনো বিশেষ পক্ষের হয়ে ধ্বজা ওড়াননি। তবে গু-গা-বা-বা'র মতো তিনিও যে স্রেফ 'ভালোর দলে', তা লেখাগুলি খুঁটিয়ে পড়লে বেশ বোঝা যায়। ভালো-মন্দ অবশ্যই আপেক্ষিক এবং সেকথা মাথায় রেখেই প্রতিটি রচনায় দু-দিকেই সুতো ছাড়া রয়েছে। প্রতিটি লেখায় যুক্তির উজ্জ্বল উপস্থিতি। উপরি পাওনা চমৎকার সব উপমা। কাগুজে লেখা অনেকাংশে ক্ষণস্থায়ী হলেও, সংকলিত রচনাগুলির বেশিরভাগই এই দুহাজার একুশেও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। উনিশ শতকে বাঙালির হুতোম প্যাঁচা ছিল, বিশে ছিল কালপেঁচা। চন্দ্রিল ভট্টাচার্য সেই প্রাতঃস্মরণীয়দের যোগ্য উত্তরসূরি। সমকালীন সমাজকে যেভাবে তিনি দেখেন ও দেখান, তা অতুলনীয়। একুশ শতকের বাংলা গদ্যসাহিত্যে চন্দ্রিল যেন লক্ষ্মীপ্যাঁচা হয়ে বঙ্গসমাজের রঙ্গতামাশা গদ্যের নকশায় মেলে ধরছেন পাঠকের কাছে। অতঃ কিম্? সময় পেলে একবার চক্কর মেরে আসুন 'ঘন চক্কর'-এর পৃষ্ঠায়। ভালো লাগতে পারে, মন্দ লাগতে পারে। তবে ভাবনার গোড়ায় সার আর বুদ্ধিশুদ্ধির গোড়ায় নাড়া—এদুটো যে দেবেই তা হলফ করে বলা যায়। # বই: ঘন চক্কর প্রকাশক: দে'জ় প্রথম প্রকাশ: জানুয়ারি,২০১৮ বিনিময়: দু'শো টাকা






Comments