top of page
Search

সহানুভূতি নয়, সমানুভূতির সহজপাঠ

"Do all the good you can, By all the means you can, In all the ways you can, In all the places you can, At all the times you can, To all the people you can, As long as ever you can." # (John Wesley's Rule) "When given the choice between being right or being kind, choose kind." # (Dr. Wayne W. Dyer) না, যত সহজে ওপরের কথাগুলো বলে ফেলা যায় বা লিখে ফেলা যায়, তত সহজে তার প্রয়োগ ঘটতে দেখা যায় না সচরাচর। অথচ সহজ এই কথাগুলো মেনে চলার জন্য খুব বেশি কসরত করার দরকার নেই, দরকার স্রেফ একটু সহমর্মিতার এবং সমানুভূতির। এই সহমর্মিতারই বিস্ময়কর এক কাহিনি আর.জে.প্যালাসিও-র 'ওয়াণ্ডার'। সমাজের নানান প্রেজুডিসের অসারতা ও অর্থহীনতার অন্ধকারের বিপরীতে আলোর অভিমুখে উত্তরণের কাহিনি 'ওয়াণ্ডার' যার পরতে পরতে উন্মোচিত হতে থাকে সকলের মাঝে নিজেকে এবং নিজের মধ্যে সকলকে অনুভব করার অসামান্য এক অভিজ্ঞান। আমার আমিটুকু অন্য অনেকের কাছেই যখন গ্রহণযোগ্য হয় না, তখন অন্যের আয়নায় প্রত্যাখ্যাত হতে হতে নিজের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার এবং তারপর 'আপন হতে বাহির হয়ে' বিশ্বলোকের মাঝে একাকার হয়ে যাওয়ার বিস্ময় ছড়িয়ে রয়েছে এই নভেলে। বছর দশেকের এক খুদে অগি পালম্যান। আজন্ম তাকে লড়াই চালিয়ে যেতে হয় মৃত্যুর সঙ্গে। একের পর এক অপারেশনের ক্ষত তার দেহে ও মনে। তাকে দেখতে ঠিক আর পাঁচজনের মতো নয়। এক বিশেষ মেডিক্যাল কণ্ডিশনে তার মুখাবয়ব অন্যরকম। তার চোখ-কান-নাক-মুখগহ্বরের আকৃতিগত অনুপাত সাধারণ নয়। সে অ-সাধারণ আর সেই অসাধারণত্বের ভারে সে জর্জরিত। তার মুখের দিকে তাকালে ভয় পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় সকলে। তাই সেও নিজের অন্যরকম মুখ লুকিয়ে রাখতে চায় অ্যাস্ট্রোনটের হেলমেটের আড়ালে, যে হেলমেট মাথায় দিয়ে একদিন সেও যেতে চায় মহাকাশ অভিযানে। অগিকে যে কেউ ভালোবাসে না তা কিন্তু মোটেই নয়। তার মা-বাবা আর দিদি তাকে খুবই ভালোবাসে। নিজের ভাইয়ের মতোই তাকে ভালোবাসে দিদির বেস্টফ্রেন্ড মিরাণ্ডা। তবু নিজেকে সে মেনে নিতে পারে না, মেনে নিতে পারে না তার অন্যরকম হওয়াটাকে। দীর্ঘদিন হোমস্কুলিং-এর পর সরাসরি মিডল স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে প্রচণ্ড নার্ভাস হয়ে যায় অগি। ভয় পায় যে সে কারুর বন্ধু হতে পারবে না, কেউ তাকে গ্রহণ করবে না। তার সেই ভয় প্রাথমিকভাবে সত্য হিসেবে প্রমাণিত হলেও ধীরে ধীরে নানান ঘটনার মধ্যে দিয়ে সে বুঝতে পারে যে জার্নিটা পুরোটাই খারাপ নয়। সেই জার্নিতে অনেক মণিমুক্তো ছড়িয়ে রয়েছে যা আস্তে আস্তে তাকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে নতুন এক বৃহত্তর জগতে। বুদ্ধিমান ছাত্র হিসেবে সে নজর কাড়ে শিক্ষকদের, সমীহ আদায় করে নেয় তার সহপাঠীদের। সামারের মতো বন্ধুর খোঁজ পায় সে, যে নির্দ্বিধায় অগিকে গ্রহণ করে‌ যখন অন্যরা তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জ্যাকের সঙ্গে তার চমৎকার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে তারা। পপুলার ক্লাসমেট জুলিয়ান তাকে কোণঠাসা করতে চাইলে সে কষ্ট পায় ভীষণ, কিন্তু জ্যাক ও অন্য অনেকে তার সেই কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। নেচার রিট্রিটে গিয়ে সে যে সৌন্দর্য তার সহপাঠীদের মধ্যে আবিষ্কার করে, তার অতুলনীয় স্বাদ তাকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে। অগি বোঝে যে তার জন্য স্রেফ ঘৃণা নয়, আন্তরিক ভালোবাসাও বরাদ্দ রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে। সে উপলব্ধি করে যে চারপাশের অনেক খারাপের মধ্যেও কিছুটা ভালো অন্তত আছে যার জন্য বেঁচে থাকা যায়। সে আর নিজের অন্যরকম হওয়ার জন্য গুটিয়ে নেয় না নিজেকে। নিজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে, নিজেকে ভালোবাসতে শেখে। অগির পাশাপাশি তার দিদি ও বন্ধুদের জার্নিটাও খুব সুন্দরভাবে বুনে দিয়েছেন লেখক। ভাই অগিকে খুব ভালোবাসলেও টিনএজার ভিয়া তার মা-বাবাকে বেশি সময় কাছে না পেয়ে গুমরে মরে। সে বোঝে যে অগিকে সঙ্গত কারণেই আগলে রাখতে হয় তার মাকে, তবু নিজের অভিমানের সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে সে জেরবার হয়ে যায়। তারপর একসময় তার অভিমান ভাঙে, চোখের সামনে ঝাপসা ফ্রেমটা স্পষ্ট হয়ে দূর করে দেয় তার কষ্ট। অগির বেস্টফ্রেণ্ড হয়ে ওঠা জ্যাকের কথাও এখানে বলা দরকার যে মুখোমুখি হয় আরেকরকম বদলের। সে অগির সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল বাধ্য হয়ে, মিডল স্কুলের প্রধান মিস্টার টাশম্যানের অনুরোধে। প্রথমে অগিকে সে বন্ধু হিসেবে একেবারেই মেনে নিতে পারেনি মন থেকে। কিন্তু পরে সে বুঝতে পারে যে অগির বন্ধুত্ব তার কাছে কতটা মূল্যবান। এইভাবে আরো অনেক চরিত্র অগিকে গ্রহণ করতে শেখে, ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে শেখে। বুঝতে চায় তারা অগিকে আন্তরিকভাবে এবং তাদের সেই চেষ্টা তাদের নতুন এক অজানা দিগন্তের হদিশ দেয়। খুব সহজ ও সাবলীল ভাষায় গল্প বলেছেন প্যালাসিও। ফার্স্ট পার্সন ন্যারেটিভে অগি ছাড়াও সেখানে নিজের বক্তব্য পেশ করেছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেরা। আর সেই বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বচ্ছন্দে এগিয়ে চলেছে কাহিনি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ঘৃণার অসুখ তা বারবার উঁকি দিয়েছে কাহিনির গতিপথে, চোখ রাঙিয়েছে আমাদের নিত্যদিনের ভণ্ডামি। কিন্তু সেসব মলিনতা বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার স্রোতে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে। সবথেকে ভালো লেগেছে মূল উপন্যাসের শেষে জুলিয়ানকে নিয়ে একটি অতিরিক্ত অধ্যায় যেখানে আমরা দেখতে পাই কীভাবে জুলিয়ান অগির প্রতি তার দুর্ব্যবহার আর নিষ্ঠুর আচরণের কদর্যতা বুঝতে পারে আর তারপর তার মধ্যে আসে পরিবর্তন। যে পরিবর্তন তার অহঙ্কারী স্বভাব বদলে দিয়ে তাকে এগিয়ে নিয়ে যায় নম্রতা ও স্নিগ্ধতায় ভরা এক অন্য জগতে যে জগতের কাছে তাকে এগিয়ে দেয় তার গ্র্যানির যুদ্ধবিধ্বস্ত ছোটোবেলার এক অপূর্ব বন্ধুত্বের আখ্যান। জুলিয়ানকে নিয়ে এই অতিরিক্ত অধ্যায় পাঠকের কাছে সেই চিরন্তন বার্তাই আবারো পৌঁছে দেয় যে কোনো চরিত্রই স্রেফ সাদা বা স্রেফ কালো কখনোই নয়, বরং দুয়ের মিশ্রণে ধূসর। ভালো ও মন্দ তাই আপেক্ষিক, একপেশে নয় এবং তথাকথিত 'খারাপ' ব্যক্তিও ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথের পথিক হতেই পারে। অন্যকে যেনতেনপ্রকারেণ ছোটো করা, কষ্ট দেওয়া এবং ঘৃণার নখ-দাঁত বের করে আঁচড়ে-কামড়ে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করার sadistic উল্লাসটাই যখন মেজরিটির কাছে খুব সহজে অনুসরণযোগ্য 'ধর্ম', তখন এই গোত্রের বই আরো বেশি করে উঠে আসুক পাঠকের হাতে। এই বই পাঠকদের ভাবিয়ে তুলবে গভীরভাবে। বস্তাপচা খিস্তি-খেউড়, হাল-আমলের অসংবেদনশীল সস্তা 'মিম' কালচার ও নানাবিধ 'শেমিং'-এর অসারতা উপলব্ধিতে সাহায্য করবে। আর তখন অতি সহজেই সব উচ্চ-নীচ, ছোটো-বড়োর ভেদাভেদ ভুলে অগি পালম্যানের মতোই আমরাও আমাদের মনের মধ্যে টের পাব: "Everyone in the world should get a standing ovation at least once in their life because we all overcometh the world." ### Wonder by R.J.Palacio/Illustration: Tad Carpenter/Published by CORGI/₹399

 
 
 

Comments


©2021 by SPOUT BOOKS. Proudly created with Wix.com

bottom of page