অধ্যাপক জয়ন্তী বসুর লেখা ভূমিকা,
আচ্ছা, দেখছেন তো পৃথিবীর অবস্থা। মানুষ হয়ে লাভ কি বলুন তো? তার চেয়ে অনেক ভাল নয় কি নেকড়ে নামের ইলেকট্রিশিয়ান বেড়াল, নিদেন পক্ষে রতন নামের ঈষৎ হ্যাংলা কচ্ছপ হওয়া? হলই বা রতন একটু খোঁড়া। বেশি নড়াচড়া করার তো দরকার নেই আপনার। আমাদের বেজায় লক্ষ্মী ছেলে ভানু সুযোগ পেলেই এক থলে জবাফুল আর পাতা তো আপনাকে খেতে দেবেই। আর যদি আপনি ঘরকন্না করতে পছন্দ করেন, তাহলে হতেই পারেন রঘু বাঁদর, যার সুন্দরী বাঁদরানীর নাম শ্যামলী। তার আবার লাল শাড়ি খুব পছন্দ। তা বউয়ের সাজগোজের শখের জন্য তো আপনাকে একটু বন্দোবস্ত করতেই হবে। এখনও হয় না কি?
কি বলছেন? জন্তু-জানোয়ার হতে রাজি নন আপনি? প্রেস্টিজে লাগছে? তাহলে রোবট হবেন? অবশ্য মানুষের আণ্ডারেই কাজ করতে হবে, তা সে তো এখনো করেন। আপনার বস তো খুব সম্ভবত মানুষই। স্বভাবতই কাজে কর্মে আপনার দক্ষতার তুলনা হবে না; তবে করোনা হলে কিন্তু পোস্ট-কোভিড সিম্পটমের মধ্যে মানুষ মানুষ স্বভাব হবার রিস্ক থেকেই যাচ্ছে। আপত্তি না থাকলে রোমিও নামের রোবট ভৃত্যও হতে পারেন। সামনের বাড়ির সুন্দরী পরিচারিকা মাধুরীকে আপনার জুলিয়েট ভাবলেই হল। তবে মাধুরী মানুষকে বিয়ে করে পালিয়ে যেতে পারে, এই যা রিস্ক। তা, সংসার কি আর কোনরকম রিস্ক ছাড়া হবে?
মানুষ হলেও রিস্ক কি কম? ধরুন আপনি দুর্গাপুজায় পাড়ার নাটকে সরস্বতী সেজেছেন। কিন্তু আপনি তো আবার গান জানেন না। ঠিক ছিল মোবাইলে গান বাজবে আর আপনি লিপ দেবেন। কিন্তু যথাকালে ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে’ র মাঝপথে ‘দম মারো দম’ শুরু হয়ে গেলে আপনি আর কি করবেন? সত্যিকারের মা সরস্বতী হলেও কিই বা করার ছিল? মোবাইলে ভুলভাল হাত পড়ে যেতেই তো পারে মানুষের।
দেখুন, বেঁচে থাকতে হলে সমস্যা আছে, সমাধানও আছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে সব ব্যবস্থা আছে। লাইফস্টাইল ডিজিজ বাঁধিয়ে বসে আছেন? তেল মশলা সব বন্ধ? মানসবাবুর কিন্তু কোন সমস্যা হয় নি। সৌজন্যে ডাক্তার ইচ্ছাপূরণ মল্লিক। কার্ডিওলজিস্ট হবার সুবাদে হার্টের রুগীদের খাবারদাবারের দুঃখ তিনি জানেন। তাই এমন একটি বন্দোবস্ত করেছেন যাতে তাঁর রুগীদের মটরশুঁটি ফেলা ভাতকে মনে হয় ফ্রায়েড রাইস, আর সবজির স্যালাডকে নবরতন কোর্মা।
দুনিয়ায় কিন্তু এইরকম অনেক কিছু ব্যাপারস্যাপার আছে । আপনি যে থোর-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোর জীবন কাটাচ্ছেন, সেটিই একমাত্র অপশন নয়। জানতে হলে আপনাকে পড়তেই হবে সুব্রতা দাসগুপ্তের ‘বেড়াল এবং কয়েকজন’। সুব্রতা নাকি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক। তাই মানুষের আর না-মানুষের মন পড়ে ফেলছেন সমান দক্ষতায়। তেরোটি চমৎকার আজগুবি-হলেও-সত্যি ঘটনার ঝুড়ি। না-মানুষদের জন্য তেরো তো আবার লাকি নাম্বার!
বেড়াল এবং কয়েকজন
Bengali