top of page

অল্প অল্প গল্প

Public·1 member

হাতিশাল

বেতলা আমার খুব পছন্দের টাউন, সপ্তাহের মাঝখানে গেলে বেতলা খুব সুন্দর। ওখানের রদ্দুর কাঁচা-হলুদবাটার মত। বেতলার নিজস্ব গন্ধ আছে, বন-তুলসীর গন্ধ, হিপনটিক্‌। বেতলা পালমৌ ফরেস্ট রেঞ্জে। বেতলা চক্‌ থেকে একটু বেরলেই চারিদিকে শালের জঙ্গল আর সেই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলেছে পাকদন্ডী। ওগুলো গেছে আসলে বুরহা নদীতে, রাস্তার এধারে দাঁড়িয়ে পাকদন্ডীগুলোর ডেস্টিনেশন নিয়ে রোমাঞ্চ করতে বেশ ভালই লাগে। আমরা বেশ কয়েকবার এই রাস্তায় ঢুকে ফেঁসেছি। এরকম রাস্তায় গাড়ি ঘোরাবার যায়গা থাকে না, মোবাইল ফোনে টাওয়ার থাকে না, তখন সঙ্গী বলতে বুনো হাতি, হরিণ, শেয়াল, খরগোশ, আর সাপ। সঙ্গে মন মাতানো উত্তেজক জঙ্গুলে গন্ধ। উত্তেজনা অন্যকিছুর নয়, ভয়ের। জাতভাই বাঁদরগুলোও খুব একটা এদিকে ভেড়ে না, ভাগ্য নেহাত বিরক্ত না হলে ঘন্টা তিনেক এরকম জঙ্গলে আটকে থাকলে একটা অন্তত কাঠ কাটার শব্দ পাওয়া যায়।


বেতলা ফরেস্ট রেস্ট হাউসের পেছনে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের হাতিদের চিকিৎসা আর দেখভাল করার জায়গা, হাতিশাল গোছের। রেস্ট হাউসের নতুন বিল্ডিঙের পেছনে, ওখানে যাওয়ার জন্য টিলা বেয়ে একটু নীচে নাবতে হয় । টিলা গুলো বিশেষ বড় নয়, শাল গাছে ঘেরা। পেছনে ঝকঝকে সবুজ মাঠ, ওটা বড় একটা চড়াগাহ, মানে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের পোষা হরিণ আর হাতি চড়ে, মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য।


একদিন আমি টিলার ওপর থেকে নীচে হাতিদের কর্মকাণ্ড দেখছিলাম। তিনটে বড় হাতি, ওদের মধ্যে একটা মা হাতি আর তার একটা একবছরের বাচ্চা। বাচ্চাটা খেলছে, হাতিগুলো ঘেরা জায়গায় নিজদের মত ঘুরছে, বা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ইন্টারেস্ট নিয়ে একটু একটু করে এগোচ্ছি নীচে নাবার জন্য, আর এমন সময় আমার হাঁটার ফলে নুড়িপাথর গড়িয়ে যেই কিনা খড় খড় আওয়াজ হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে একটা পেল্লাই ট্রাম্পেট আকাশ বাতাস ছিঁড়ে খুঁড়ে বেজে উঠলো, মা হাতি! তার সে কি ডাক! ওরকম সাংঘাতিক ওয়ার্নিং আর জবরদস্ত আওয়াজ আমি আগে কখনো শুনিনি। এই ডাকাডাকি পর্বে সচকিত হয়ে ওদের মাহুতও আমাকে নীচে ডাকলো কিন্তু আমি এগোইনি, আমার সাহসে কোলায়নি। বরং শাল গাছের আড়ালে গিয়ে সেঁধিয়ে ছিলুম।


কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর পর, দেখি একজন অফিসার এসে মহুতদের কিসব বললো, তারপর বাচ্চাটাকে ওরা ওষুধ খাওয়াবে। মানে বিষয়টা সোজা নয়, পাছু দিয়ে খাওয়াতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে ওদের একজন ওর লেজুটা যেই ধরেছে বাচ্চাটা ওমনি তিড়িং করে লাফিয়ে ছুটতে শুরু করলো। কাছেই একটা টিউবওয়েল ছিলো তার পাশে একটু ঘেরা জায়গা, বাচ্চাটা ওটার চারিদিকে টুই টুই করে ঘুরছে, মাহুতরাও তার পেছন পেছন ঘুরছে। খানিকক্ষণ রেলগাড়ি ধরাধরি খেলার পর বাচ্চাটাকে ওষুধ খাওয়ানো গেলো। এবেলায় ওর মা টু-শব্দটিও করেনি। পরে একজন মাহুত বলেছিলো ওর চামড়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে।


অতঃপর সকালের খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি করে ওই ছোট্ট হাতির দলকে মাহুতরা শালের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গেল স্নান করাতে, বুরহা নদীতে। ওখানে গিয়ে বালির চরে ওরা খানিক্ষন এদিক ওদিক করবে, বাচ্চাটা বালি মাখবে, ওর মা ওকে বকবে ইত্যাদি ... এটা ওদের রোজনামচা ... বাচ্চা হাতিটা পিড়িং পিঁড়িং করে আগে আগে চলছে, আমি ভয়ে উঁচুতেই দাঁড়িয়ে আছি, টিলার ওপর, কিন্তু খুব উঁচু নয়, এই না মা হাতি আবার আমাকে বকে। যাইহোক দ্বিতীয়বার বকেনি।

26 Views

©2021 by SPOUT BOOKS. Proudly created with Wix.com

bottom of page